আশিকুর রহমান শান্ত, ভোলা
ভোলার বোরহানউদ্দিনে জমিদার বাড়ির ওয়াকফ ষ্টেটের উপর আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গুচ্ছ গ্রাম, জমি বন্দোবস্ত এবং জলমহাল লীজ দেয়ার অভিযোগে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জমিদার বাড়ির ওয়াকফ ষ্টেটের বর্তমান মোতোয়াল্লী মুনসুরুল আলম চৌধুরী ।
শুক্রবার (২ মে) দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মুনসুরুল আলম চৌধূরী বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলা তথা ভোলা জেলার মধ্যে আব্দুল জব্বার মিঞা বাড়ি একটি ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ী। আবদুল জব্বার মিঞার জীবদ্দশায় বাংলা ১৩৩৭ সনের ১৪ ইং আষাঢ় তার সকল সম্পত্তি ওয়াকফ ভুক্ত করে রেজিস্ট্রি করে যান। যাহার-ই,সি নম্বর-১২৬১। তার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগন ধারাবাহিক ভাবে মোতোয়াল্লী থাকিয়া ওয়াকফ ষ্টেট পরিচালনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বিগত পাকিস্তান সরকার বাহাদুর জরিপ আমলে ২০ ধারা মোতাবেক অতিরিক্ত জমি হিসাবে খাস করিয়া নোটিশ জারী করিলে, তৎকালীন ওয়াকফ ষ্টেটের মোতোওয়াল্লী খোরশেদ আহমেদ চৌধুরী ১৯৬০ সালে বরিশাল জেলার আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা রুজু করেন। যাহার নম্বর ২য় সাবজজ ২১৯/১৯৬০ ইং। কোট বদলী অন্তে ৪র্থ সাবজজ ২২/১৯৬১ ইং মামলাটি চলমান অবস্থায় খারিজ হয়ে গেলে খারিজের বিরুদ্ধে ১৯৬২ সালে ঢাকা মহামান্য হাইকোর্টে এফ.এ ২০০/১৯৬২ নং মোকদ্দমা রুজু হয়। মহামান্য হাইকোর্টে উক্ত মামলা চলমান থাকায় বরিশাল বিভাগ হাই কোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে ১৫/০৫/১৯৯০ সনে মোকদ্দমাটি মঞ্জুরক্রমে কিছু অবজারবেশন সেশনের মাধ্যমে নিন্মকোর্টে ফেরৎ পাঠান। এবং ১৫/০৫/১৯৯০ ইং তারিখের অর্ডারটি ৪৩ D.L.R পৃষ্ঠা নম্বর-২৬৪-২৬৯ এ প্রকাশিত হয়।
১৯৬০ সালের ২৪ আগস্ট দায়ের করা মামলার প্রথম থেকেই বাদীর নিষেধাজ্ঞার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের উপর Staytusquo নিষেধাজ্ঞা আদেশ বহাল থাকে। পরবর্তীতে পুনঃ পর্যালোচনার জন্য ভোলার আদালতে প্রেরন করেন। যার মোকদ্দমা নং ১৪/৯৪। মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় সরকারের কিছু নিম্ন পদস্থ কর্মচারীর যোগাযোগে মোকদ্দমার তথ্য গোপন রেখে প্রশাসনকে ভুল বুঝাইয়া সাড়ে তিন শত একর জমি বন্দোবস্ত (কার্ড) দেয়া হয়। উক্ত কার্ড হোল্ডারগণ কার্ডের ক্ষমতাবলে ১৪/৯৪ নং মোকদ্দমায় পক্ষভুক্ত হইতে চাইলে বিজ্ঞ আদালত তা খারিজ করে দেয়।
উক্ত খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে কার্ড হোল্ডারগণ মহামান্য হাইকোর্ট রিভিশন নাম্বার ৩৫০৯/৯৪ ইং মোকদ্দমা করিলে উক্ত মোকদ্দমায়ও বাদী পক্ষ নিষেধাজ্ঞার আবেদন করিলে ১-৪ নং বিবাদী সরকার পক্ষকে অর্থাৎ ভোলা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), এদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়া বাদীকে বিরোধীয় জমি থেকে বেদখল বা লীজ দেওয়া থেকে বিরত রাখার আদেশ দেয়। যাহার সিভিল রিভিশন নাম্বার-২৭৮ (আর) ২০০৬ ইং। বর্তমানে উক্ত মোকদ্দমাটি ফেরৎ আসিয়া ভোলা জেলার দৌলতখান সহকারী জজআদালতে ১৪৪/১৫ ইং নং মোকদ্দমা রুপান্তরিত হয়ে চলমান থাকিয়া আগামী ২০/০৫/২০২৫ ইং তারিখ রায় প্রদানের জন্য ধার্য আছে।
ইতিপূর্বেও সরকার পক্ষ গুচ্ছ গ্রাম করিতে ব্যর্থ হইয়া এখন আবার গত বছর থেকে জলমহাল লীজ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এ বিষয়ে ভোলার জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়।
এমতাবস্থায় মামলাটি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জমিতে গুচ্ছ গ্রাম, জমি বন্দোবস্ত এবং জলমহাল যাতে লীজ দেয়া না হয় এ বিষয়ে আমরা সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।